ঢাকা , রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
দেশে বিএনপির হাত ধরে বারবার গণতন্ত্র এসেছে: অ্যাটর্নি জেনারেল বাংলাদেশ নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না: ছারছীনা পীর সাহেব হামলার প্রতিবাদে গভীর রাতে শহিদ মিনারে শিক্ষকদের মোমবাতি প্রজ্বলন ২০২৬ সালের রমজান ও ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা প্রাথমিক শিক্ষকদের পাশে থাকার ঘোষণা হাসনাত আবদুল্লাহর মধ্যরাতে ঢাকা গাজীপুর খুলনা সহ একযোগে ১৫ জেলার ডিসি বদল জয়পুরহাটে জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির অর্ধশতাধিক কর্মী-সমর্থক চেতনানাশক খাইয়ে সিএনজি ছিনতাই চক্রের নয় সদস্য গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে কেনো প্রতিবার অবহেলা— প্রশ্ন রুমিন ফারহানার খুলনায় দুই সাংবাদিকের উপর হামলা; স্থানীয় সাংবাদিক মহলের নিন্দা

ছেলের জীবন বাঁচাতে কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত বাবার — হৃদয়বিদারক সংগ্রামে শিক্ষক মনিরুজ্জামান লিটন

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০৭:৫২:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৭৯ বার পড়া হয়েছে

জীবনের সবচেয়ে নির্মম বাস্তবতা তখনই সামনে আসে, যখন এক বাবা নিজের অঙ্গ বিক্রির কথা ভাবেন শুধুমাত্র সন্তানের প্রাণ বাঁচানোর জন্য। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর শিক্ষক মনিরুজ্জামান লিটনের জীবনে।

সারা জীবন শত শত শিক্ষার্থীর মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়ানো এই মানুষটি এখন নিজেই লড়ছেন এক ভয়াবহ বাস্তবতার সঙ্গে — নিজের ছেলের প্রাণ বাঁচানোর সংগ্রামে।

মনিরুজ্জামান লিটনের বড় ছেলে রাফিউজ্জামান রাসিক, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র, আক্রান্ত হয়েছে এপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া নামের এক মারাত্মক ক্যান্সারে। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চলছে তার চিকিৎসা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাসিকের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করাতে হবে, যার খরচ প্রায় ২৫ থেকে ২৬ লাখ টাকা

২০২০ সালেই রোগ ধরা পড়ে রাসিকের শরীরে। সেই থেকে চিকিৎসা চালাতে চালাতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন শিক্ষক লিটন। আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, এমনকি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েও শেষ পর্যন্ত সব সম্পদ বিক্রি করে ফেলেছেন তিনি। এখন কেবল নিজের বাড়িটিই বাকি।

অসহায় লিটন শেষ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন—

“আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য আমি আমার কিডনি বিক্রি করতে চাই। দয়া করে কেউ সাহায্য করুন।”

এই কয়েকটি লাইনে ফুটে ওঠে এক বাবার বুকভাঙা কান্না, অসীম ভালোবাসা আর সমাজের প্রতি নিঃশব্দ আর্তনাদ।

পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই সহানুভূতি জানান, কেউ কেউ সামান্য সাহায্যের হাতও বাড়ান। কিন্তু লিটনের মুখে তখনও একটাই কথা—

“আমার ছেলে বাঁচুক, আমি না থাকলেও সমস্যা নেই।”

ভেজা চোখে তিনি বলেন,

“আমি ২০২০ সাল থেকে যুদ্ধ করছি ছেলের জন্য। এখন আর কিছু চাওয়ার নেই, শুধু ওকে সুস্থ দেখতে চাই। কেউ যদি আমার কিডনি কিনে নেয়, সেই টাকায় আমি ছেলের চিকিৎসা করাবো।”

অন্যদিকে অসুস্থ রাসিক দুর্বল কণ্ঠে বলে,

“আমার বাবা আমার জন্য সবকিছু শেষ করে দিয়েছেন। আমি সুস্থ হয়ে ডাক্তার হতে চাই, যাতে গরিব মানুষের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতে পারি। কারণ আমি জানি, কষ্টটা কেমন।”

একজন অসহায় বাবার এই সংগ্রাম শুধু তার পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্য এক নীরব প্রশ্ন— একজন সন্তানের জীবন কি টাকার অভাবে নিভে যেতে হবে?

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশে বিএনপির হাত ধরে বারবার গণতন্ত্র এসেছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

ছেলের জীবন বাঁচাতে কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত বাবার — হৃদয়বিদারক সংগ্রামে শিক্ষক মনিরুজ্জামান লিটন

আপডেট সময় ০৭:৫২:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

জীবনের সবচেয়ে নির্মম বাস্তবতা তখনই সামনে আসে, যখন এক বাবা নিজের অঙ্গ বিক্রির কথা ভাবেন শুধুমাত্র সন্তানের প্রাণ বাঁচানোর জন্য। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর শিক্ষক মনিরুজ্জামান লিটনের জীবনে।

সারা জীবন শত শত শিক্ষার্থীর মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়ানো এই মানুষটি এখন নিজেই লড়ছেন এক ভয়াবহ বাস্তবতার সঙ্গে — নিজের ছেলের প্রাণ বাঁচানোর সংগ্রামে।

মনিরুজ্জামান লিটনের বড় ছেলে রাফিউজ্জামান রাসিক, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র, আক্রান্ত হয়েছে এপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া নামের এক মারাত্মক ক্যান্সারে। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চলছে তার চিকিৎসা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাসিকের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করাতে হবে, যার খরচ প্রায় ২৫ থেকে ২৬ লাখ টাকা

২০২০ সালেই রোগ ধরা পড়ে রাসিকের শরীরে। সেই থেকে চিকিৎসা চালাতে চালাতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন শিক্ষক লিটন। আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, এমনকি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েও শেষ পর্যন্ত সব সম্পদ বিক্রি করে ফেলেছেন তিনি। এখন কেবল নিজের বাড়িটিই বাকি।

অসহায় লিটন শেষ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন—

“আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য আমি আমার কিডনি বিক্রি করতে চাই। দয়া করে কেউ সাহায্য করুন।”

এই কয়েকটি লাইনে ফুটে ওঠে এক বাবার বুকভাঙা কান্না, অসীম ভালোবাসা আর সমাজের প্রতি নিঃশব্দ আর্তনাদ।

পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই সহানুভূতি জানান, কেউ কেউ সামান্য সাহায্যের হাতও বাড়ান। কিন্তু লিটনের মুখে তখনও একটাই কথা—

“আমার ছেলে বাঁচুক, আমি না থাকলেও সমস্যা নেই।”

ভেজা চোখে তিনি বলেন,

“আমি ২০২০ সাল থেকে যুদ্ধ করছি ছেলের জন্য। এখন আর কিছু চাওয়ার নেই, শুধু ওকে সুস্থ দেখতে চাই। কেউ যদি আমার কিডনি কিনে নেয়, সেই টাকায় আমি ছেলের চিকিৎসা করাবো।”

অন্যদিকে অসুস্থ রাসিক দুর্বল কণ্ঠে বলে,

“আমার বাবা আমার জন্য সবকিছু শেষ করে দিয়েছেন। আমি সুস্থ হয়ে ডাক্তার হতে চাই, যাতে গরিব মানুষের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতে পারি। কারণ আমি জানি, কষ্টটা কেমন।”

একজন অসহায় বাবার এই সংগ্রাম শুধু তার পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্য এক নীরব প্রশ্ন— একজন সন্তানের জীবন কি টাকার অভাবে নিভে যেতে হবে?