ঢাকা , শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
১০ মাস পর লন্ডনে প্রকাশ্যে দেখা গেল সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে যথেষ্ট হয়েছে, এবার থামুন: ইরান-ইসরায়েলকে জাতিসংঘ মহাসচিব ‘আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ নয়’, জানালেন বিবিসিকে; লন্ডনে রাজা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক, তহবিল পাচার তদন্তে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি “জাতীয় স্বার্থে ড. ইউনূসের প্রয়োজন আছে” — তারেক রহমান ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে আমেরিকা হরমুজ প্রণালী বন্ধ করল ইরান, তেলের বাজারে উত্তেজনা জুলাই সনদ ছাড়া নির্বাচন নয়”—তারেক-ইউনূস বৈঠক নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিলেন এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর অজ্ঞাত স্থানে নেতানিয়াহু, নিহত ইরানের শীর্ষ জেনারেলরা ইরানে ইসরায়েলের হামলাকে ‘আইন লঙ্ঘন’ বললো জর্ডান, তীব্র প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক মহল

ড. ইউনুসের এক কথায় ৭২ হাজার কোটি রুপি গচ্চা দিতে হচ্ছে মোদিকে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০৪:২৯:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
  • ১৩০৫ বার পড়া হয়েছে

২০২৫ সালের মার্চে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সফরকালে তার করা কিছু মন্তব্য ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে অস্থিরতা তৈরি করেছে। বিশেষ করে ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চল—যাকে সাধারণত ‘সেভেন সিস্টারস’ বলা হয়—তা নিয়ে তার মন্তব্যকে অনেকেই দেখছেন এক ধরনের ভূ-রাজনৈতিক বারুদে আগুন লাগানোর শামিল।

চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ড. ইউনূস বলেন, “ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল স্থলবেষ্টিত একটি এলাকা। একমাত্র কার্যকর সমুদ্রপথ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রবেশদ্বার হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকাই মুখ্য।”

এই বক্তব্যকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা দেখছেন বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো কূটনৈতিক অবস্থান হিসেবে। ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়ে যখন ইউনূস চট্টগ্রাম বন্দরে দাঁড়িয়ে বলেন, “এই বন্দর ব্যবহার করে নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সরাসরি লাভবান হতে পারে।” তিনি যোগ করেন, “সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য।”

বাংলাদেশের এমন অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামো বাজেটে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে সম্ভাব্য ভূ-রাজনৈতিক জেদ সামলাতে ২২,০০০ কোটি রুপি ব্যয়ে শিলং-শিলচর চার লেনের হাই স্পিড মহাসড়ক করিডোর নির্মাণ শুরু করেছে ভারত। এই মহাসড়ক বাস্তবায়ন করছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (NHIDCL)।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত মাত্র একটি সরু স্থলপথ দিয়ে, যেটি ‘শিলিগুড়ি করিডোর’ বা ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত। এই করিডোরই ভারতের কৌশলগত দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ যদি রাজনৈতিক বা কৌশলগত কারণে এই করিডোর বন্ধ করে দেয়, তাহলে ভারত কার্যত তার সেভেন সিস্টারস অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

এই কৌশলগত চাপ সামলাতে ভারত বেছে নিয়েছে মিয়ানমার রুট। কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অর্থায়ন করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কলকাতা বন্দর থেকে মিয়ানমারের সিত্তে বন্দরে জাহাজ চলাচল হবে, সেখান থেকে নদীপথে পালেতোয়া এবং এরপর জরিনপুই পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করে তা ভারতের আসাম, মণিপুর, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।

সামরিক ও লজিস্টিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের সাথে উত্তেজনার পরিণতিতে ভারতের এই নতুন মহাসড়ক ও বিকল্প করিডোর নির্মাণ একটি “কৌশলগত প্যানিক রেসপন্স”। যদিও মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা সংকট ভারতের এই বিকল্প পথকেও অনিশ্চিত করে তুলেছে।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

১০ মাস পর লন্ডনে প্রকাশ্যে দেখা গেল সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে

ড. ইউনুসের এক কথায় ৭২ হাজার কোটি রুপি গচ্চা দিতে হচ্ছে মোদিকে

আপডেট সময় ০৪:২৯:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

২০২৫ সালের মার্চে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সফরকালে তার করা কিছু মন্তব্য ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে অস্থিরতা তৈরি করেছে। বিশেষ করে ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চল—যাকে সাধারণত ‘সেভেন সিস্টারস’ বলা হয়—তা নিয়ে তার মন্তব্যকে অনেকেই দেখছেন এক ধরনের ভূ-রাজনৈতিক বারুদে আগুন লাগানোর শামিল।

চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ড. ইউনূস বলেন, “ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল স্থলবেষ্টিত একটি এলাকা। একমাত্র কার্যকর সমুদ্রপথ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রবেশদ্বার হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকাই মুখ্য।”

এই বক্তব্যকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা দেখছেন বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো কূটনৈতিক অবস্থান হিসেবে। ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়ে যখন ইউনূস চট্টগ্রাম বন্দরে দাঁড়িয়ে বলেন, “এই বন্দর ব্যবহার করে নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সরাসরি লাভবান হতে পারে।” তিনি যোগ করেন, “সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য।”

বাংলাদেশের এমন অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামো বাজেটে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে সম্ভাব্য ভূ-রাজনৈতিক জেদ সামলাতে ২২,০০০ কোটি রুপি ব্যয়ে শিলং-শিলচর চার লেনের হাই স্পিড মহাসড়ক করিডোর নির্মাণ শুরু করেছে ভারত। এই মহাসড়ক বাস্তবায়ন করছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (NHIDCL)।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত মাত্র একটি সরু স্থলপথ দিয়ে, যেটি ‘শিলিগুড়ি করিডোর’ বা ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত। এই করিডোরই ভারতের কৌশলগত দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ যদি রাজনৈতিক বা কৌশলগত কারণে এই করিডোর বন্ধ করে দেয়, তাহলে ভারত কার্যত তার সেভেন সিস্টারস অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

এই কৌশলগত চাপ সামলাতে ভারত বেছে নিয়েছে মিয়ানমার রুট। কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অর্থায়ন করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কলকাতা বন্দর থেকে মিয়ানমারের সিত্তে বন্দরে জাহাজ চলাচল হবে, সেখান থেকে নদীপথে পালেতোয়া এবং এরপর জরিনপুই পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করে তা ভারতের আসাম, মণিপুর, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।

সামরিক ও লজিস্টিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের সাথে উত্তেজনার পরিণতিতে ভারতের এই নতুন মহাসড়ক ও বিকল্প করিডোর নির্মাণ একটি “কৌশলগত প্যানিক রেসপন্স”। যদিও মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা সংকট ভারতের এই বিকল্প পথকেও অনিশ্চিত করে তুলেছে।