ঢাকা , বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
চীন সফরে যাচ্ছে জামায়াতের প্রতিনিধিদল ভারতের ঢলে ভেঙে গেল ৩ নদীর বাঁধ, ডুবে গেল ৩০ গ্রাম কক্সবাজার সৈকতে ভেসে এলো আরও এক শিক্ষার্থীর মরদেহ ইরানের হাতে এসেছে চীনের আধুনিক হিউ কিউ-৯ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল বিশ্ব আর কোনো সম্রাট চায় না: ট্রাম্পকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারি আগামী নির্বাচনে বেশির ভাগ মানুষ ভোটই দিতে যাবে না: মাসুদ কামাল যাত্রাবাড়ী গণহত্যা: ৫২ জন নিহতের বিবিসি অনুসন্ধান উন্মোচন করল ইতিহাসের নির্মম এক অধ্যায় প্রায় ৪০ বছর পর ফের ইরানে অস্ত্র সরবরাহ শুরু করল চীন জুলাই আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত: রয়টার্স ও টেলিগ্রাফে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ

শুভ জন্মদিন স্যার, আপনার সঙ্গে কাজ করা বিরাট সম্মানের: প্রেস সচিব 

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ১২:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • ২০২ বার পড়া হয়েছে

এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বলেছেন, শুভ জন্মদিন স্যার। আপনার সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য এক বিরাট সম্মান।

আজ শনিবার (২৮ জুন) প্রথম প্রহরে নিজের ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বড় একটি পোস্ট দিয়ে তিনি একথা বলেন।প্রেস সচিব বলেন, আমি এটি লিখেছিলাম ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪-এ, যখন পরিস্থিতি ছিল চরমভাবে বিষণ্ন— আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের কয়েকদিন পর:

পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো- অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার দেন না। তবু আপনি চাইলে তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন, আর পৃথিবীর সবকিছু নিয়েই দীর্ঘ আলাপ চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তিনি রেকর্ডে কিছু বলবেন না। এ মাসের শুরুতেই তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের ভাষ্যে, এই বিচার একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরিকল্পনার অংশ—তাকে অপমান করার একটি কৌশল।

ড. ইউনুস তার আইনি সমস্যাগুলো নিয়ে কিছু বলেন না। বরং তিনি যেন গ্রিক স্টোয়িক দার্শনিকদের মতো করে কথা বলেন। তিনি নীরবে কষ্ট সহ্য করেন। তার আইনজীবীরা বলছেন, তার বিরুদ্ধে ১৭০টির বেশি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে একটি দুর্নীতি মামলাও আছে—যেটির কারণে তাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য জেলে যেতে হতে পারে। এখন তিনি জামিনে আছেন। তবে, এভাবে আর কতদিন তাকে জেলের বাইরে রাখা যাবে, সে ব্যাপারে তার আইনজীবীরাও নিশ্চিত নন।

অধ্যাপক ইউনূস আমাদের সময়ের একজন নায়ক। তার পাণ্ডিত্য কিংবদন্তির মতো। তার সবচেয়ে অনন্য গুণ হলো—তিনি জটিল কোনো অর্থনৈতিক তত্ত্ব বা ভূরাজনৈতিক বিষয়কেও সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারেন। এটি বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে খুবই বিরল। আমি অনেক বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি, যারা অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ আর হার্ভার্ডে পড়েছেন। তারা ভাষার ব্যাখ্যা বা জ্ঞানের গভীরতায় ড. ইউনূসের ধারেকাছেও যেতে পারেন না। এই গুণটিই তার বক্তৃতাগুলোকে এত সংগত, মার্জিত ও সহজবোধ্য করে তোলে।

মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে অবস্থিত ইউনূস সেন্টারে, ২০০৬ সালের শান্তিতে নোবেলজয়ীর কার্যালয়ে এখন যেন একটা হাল ছেড়ে দেওয়ার বাতাবরণ। বিদেশে না থাকলে ড. ইউনূস এখানে নিয়মিতই লোকজনের সঙ্গে দেখা করেন। তবে এখন খুব কম বাংলাদেশি মানুষই তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। কেননা, পরিণতি নিয়ে তারা শঙ্কিত। যদিও ড. ইউনূস এতে কিছুই মনে করেন না।

ইউনূস সেন্টারের সূত্রে জানা গেছে, সুইজারল্যান্ডে তার জন্য অফিস ও জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেখানে ইউনূস সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু তিনি তার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ছাড়তে চান না। ইউরোপে চলে গেলে তার আন্তর্জাতিক যাতায়াত আরও সহজ হতো, আর তার সামাজিক ব্যবসা ও ক্ষুদ্রঋণের অভিনব ধারণা ছড়িয়ে দিতে আরও বেশি সময় পেতেন। কিন্তু ড. ইউনূস এই দেশ ছাড়তে রাজি নন— কারণ এ দেশেই তিনি জন্মেছেন। তার প্রথম বিয়েটি ছিল এক মার্কিন নারীর সঙ্গে। যেটি ভেঙে যায় মূলত এই কারণে যে, তিনি বাংলাদেশেই থেকে নিজের চিন্তাভাবনা এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন।

আমি ড. ইউনূসের মতো দেশপ্রেমিক মানুষ আর দেখিনি। কিন্তু তিনি দেশপ্রেম নিয়ে কখনো কথা বলেন না। সেন্টারের সূত্র বলছে, তিনি বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫০০ বেডের একটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তার হাতে অর্থও আছে, জমিও আছে। কিন্তু বছরের পর বছর যাবৎ তিনি কোনো অনুমোদন পাননি। তার প্রতিষ্ঠিত নার্সিং ইনস্টিটিউট দেশের সবচেয়ে দক্ষ নার্স তৈরি করে। কিন্তু সেই ইনস্টিটিউট সম্প্রসারণ করতে পারছেন না—কারণ, অনুমোদন নেই। ড. ইউনূস এসব বিষয়ে কিছু বলেন না। আমাদের পূর্বপুরুষদের মতো—যারা নীরবে কষ্ট সহ্য করতেন—তিনিও নিরব থাকেন, আর কেবল এক প্রশস্ত হাসি উপহার দেন।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চীন সফরে যাচ্ছে জামায়াতের প্রতিনিধিদল

শুভ জন্মদিন স্যার, আপনার সঙ্গে কাজ করা বিরাট সম্মানের: প্রেস সচিব 

আপডেট সময় ১২:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বলেছেন, শুভ জন্মদিন স্যার। আপনার সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য এক বিরাট সম্মান।

আজ শনিবার (২৮ জুন) প্রথম প্রহরে নিজের ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বড় একটি পোস্ট দিয়ে তিনি একথা বলেন।প্রেস সচিব বলেন, আমি এটি লিখেছিলাম ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪-এ, যখন পরিস্থিতি ছিল চরমভাবে বিষণ্ন— আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের কয়েকদিন পর:

পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো- অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার দেন না। তবু আপনি চাইলে তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন, আর পৃথিবীর সবকিছু নিয়েই দীর্ঘ আলাপ চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তিনি রেকর্ডে কিছু বলবেন না। এ মাসের শুরুতেই তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের ভাষ্যে, এই বিচার একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরিকল্পনার অংশ—তাকে অপমান করার একটি কৌশল।

ড. ইউনুস তার আইনি সমস্যাগুলো নিয়ে কিছু বলেন না। বরং তিনি যেন গ্রিক স্টোয়িক দার্শনিকদের মতো করে কথা বলেন। তিনি নীরবে কষ্ট সহ্য করেন। তার আইনজীবীরা বলছেন, তার বিরুদ্ধে ১৭০টির বেশি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে একটি দুর্নীতি মামলাও আছে—যেটির কারণে তাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য জেলে যেতে হতে পারে। এখন তিনি জামিনে আছেন। তবে, এভাবে আর কতদিন তাকে জেলের বাইরে রাখা যাবে, সে ব্যাপারে তার আইনজীবীরাও নিশ্চিত নন।

অধ্যাপক ইউনূস আমাদের সময়ের একজন নায়ক। তার পাণ্ডিত্য কিংবদন্তির মতো। তার সবচেয়ে অনন্য গুণ হলো—তিনি জটিল কোনো অর্থনৈতিক তত্ত্ব বা ভূরাজনৈতিক বিষয়কেও সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারেন। এটি বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে খুবই বিরল। আমি অনেক বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি, যারা অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ আর হার্ভার্ডে পড়েছেন। তারা ভাষার ব্যাখ্যা বা জ্ঞানের গভীরতায় ড. ইউনূসের ধারেকাছেও যেতে পারেন না। এই গুণটিই তার বক্তৃতাগুলোকে এত সংগত, মার্জিত ও সহজবোধ্য করে তোলে।

মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে অবস্থিত ইউনূস সেন্টারে, ২০০৬ সালের শান্তিতে নোবেলজয়ীর কার্যালয়ে এখন যেন একটা হাল ছেড়ে দেওয়ার বাতাবরণ। বিদেশে না থাকলে ড. ইউনূস এখানে নিয়মিতই লোকজনের সঙ্গে দেখা করেন। তবে এখন খুব কম বাংলাদেশি মানুষই তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। কেননা, পরিণতি নিয়ে তারা শঙ্কিত। যদিও ড. ইউনূস এতে কিছুই মনে করেন না।

ইউনূস সেন্টারের সূত্রে জানা গেছে, সুইজারল্যান্ডে তার জন্য অফিস ও জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেখানে ইউনূস সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু তিনি তার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ছাড়তে চান না। ইউরোপে চলে গেলে তার আন্তর্জাতিক যাতায়াত আরও সহজ হতো, আর তার সামাজিক ব্যবসা ও ক্ষুদ্রঋণের অভিনব ধারণা ছড়িয়ে দিতে আরও বেশি সময় পেতেন। কিন্তু ড. ইউনূস এই দেশ ছাড়তে রাজি নন— কারণ এ দেশেই তিনি জন্মেছেন। তার প্রথম বিয়েটি ছিল এক মার্কিন নারীর সঙ্গে। যেটি ভেঙে যায় মূলত এই কারণে যে, তিনি বাংলাদেশেই থেকে নিজের চিন্তাভাবনা এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন।

আমি ড. ইউনূসের মতো দেশপ্রেমিক মানুষ আর দেখিনি। কিন্তু তিনি দেশপ্রেম নিয়ে কখনো কথা বলেন না। সেন্টারের সূত্র বলছে, তিনি বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫০০ বেডের একটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তার হাতে অর্থও আছে, জমিও আছে। কিন্তু বছরের পর বছর যাবৎ তিনি কোনো অনুমোদন পাননি। তার প্রতিষ্ঠিত নার্সিং ইনস্টিটিউট দেশের সবচেয়ে দক্ষ নার্স তৈরি করে। কিন্তু সেই ইনস্টিটিউট সম্প্রসারণ করতে পারছেন না—কারণ, অনুমোদন নেই। ড. ইউনূস এসব বিষয়ে কিছু বলেন না। আমাদের পূর্বপুরুষদের মতো—যারা নীরবে কষ্ট সহ্য করতেন—তিনিও নিরব থাকেন, আর কেবল এক প্রশস্ত হাসি উপহার দেন।