ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত ১০ মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মোট ১০টি সভায় প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক প্রকল্পে বরাদ্দ প্রায় ৫০ হাজার ৭৭ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক।
গত বছরের ৮ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া ইউনূস সরকার প্রথম একনেক সভা করে ১৮ সেপ্টেম্বর। সর্বশেষ ১০তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২৫ সালের ২৪ মে। পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়কালে চট্টগ্রামের জন্য ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রেল-সড়ক সেতু, পয়োনিষ্কাশন, পানি সরবরাহ এবং বিমানবন্দর সংস্কারসহ একাধিক মেগা প্রকল্প।
অনুমোদিত উল্লেখযোগ্য প্রকল্পসমূহ:
-
কালুরঘাট রেল-কাম-সড়ক সেতু প্রকল্প: ১১,৫৬০ কোটি টাকা
-
বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট: ১৩,৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা
-
চট্টগ্রাম পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প: ৫,১৫২ কোটি টাকা (জাইকা ঋণ: ৪,১৪৪ কোটি)
-
কাট্টালী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন প্রকল্প: ২,৭৯৭ কোটি টাকা
-
বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থা উন্নয়ন, চট্টগ্রাম জোন: ২,৭৬৪ কোটি টাকা
-
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়ন: ৬২২ কোটি টাকা
-
পয়োশোধনাগার নির্মাণের ভূমি অধিগ্রহণ: ২,১৫৪ কোটি টাকা
-
চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প: ৩,৯২১ কোটি ৪২ লাখ টাকা (বিশ্বব্যাংক ঋণ: ৩,২৬৮ কোটি)
-
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ: ১,১৩২ কোটি ও ৩৯৪ কোটি টাকা
পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন বলেন, “এসব প্রকল্প দেশের স্বার্থেই নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম জাতীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এই উপলব্ধি থেকেই চট্টগ্রামকেন্দ্রিক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।”
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, “সরকার মেগা প্রকল্প নিচ্ছে না বললেও, চট্টগ্রামের কিছু প্রকল্প বাস্তবিক অর্থেই বড় আকারের। তবে এসব প্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহ নিশ্চিত রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রাম দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হওয়ায় এই উন্নয়ন পরিকল্পনা শুধু নগর উন্নয়ন নয়, জাতীয় অর্থনীতিকেও নতুন গতি দেবে। দীর্ঘদিনের নাগরিক দুর্ভোগ ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা দূর করতে এই বরাদ্দকে ‘কৌশলগত বিনিয়োগ’ হিসেবে দেখছেন নীতিনির্ধারকরা।