ঢাকা , সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
মেহেরপুরে খোকসা যুব সংঘের কমিটি গঠন: সভাপতি হামিদুল, সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা নাটোরে জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি-জাতীয় পার্টির ৫০ নেতাকর্মী বরিশালে জামায়াত নেতার বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা মেহেরপুরে পদ্মফুল তুলতে গিয়ে একই পরিবারের চার শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু বিএনপির পাঁচ নেতাকে সব পদ থেকে বহিষ্কার ‘ফজু পাগলা’ উপাধিতে গর্বিত বিএনপি প্রার্থী ফজলুর রহমান: বলেন, আমার জন্য সারা দেশের মানুষ পাগল গৌরীপুরে সংঘর্ষের জেরে বিএনপির ৫ নেতা বহিষ্কার জিয়া পরিবারের আদর্শ ধরে রাখতে জীবন দিতেও পিছু হটবো না: এস এম জাহাঙ্গীর শাপলাকলি’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে এনসিপি: জনগণের রাজনীতি গড়ে তুলতে আহ্বান নাহিদ ইসলামের গৌরীপুরে বিএনপির মনোনয়ন দ্বন্দ্বে সংঘর্ষ: নিহত ১, আহত অন্তত ৪০

মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় স্বামীহারা পিয়ার আর্তনাদ: ‘আমার সন্তানরা এখনও বুঝতে পারে না, বাবা আর ফিরবে না’

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০৯:৪৮:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৪০ বার পড়া হয়েছে

 


“আমার সন্তানরা এখনও বুঝতে পারে না, তাদের বাবা আর কখনো ফিরবে না। তারা বলে, ‘বাবা ঘুমিয়ে আছে মা, তুমি কেন কাঁদছ?’ আমি কিভাবে ওদের বোঝাই—ওদের বাবা আর কোনোদিন জাগবে না…”
কান্নায় ভেঙে পড়া কণ্ঠে এসব কথাই বলেন রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া।

গতকাল সোমবার শরীয়তপুরের নড়িয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থানে স্বামীর দাফনের পর বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন তিনি। প্রিয়জনকে হারিয়ে দুই অবুঝ শিশুকে বুকে জড়িয়ে পিয়ার আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ।

তিনি বলেন, জীবনের অভাব–কষ্ট কখনো পরিবারকে বুঝতে দেননি কালাম। স্ত্রী–সন্তান কিংবা ভাইবোন—কারোর সমস্যা হলে সবার আগে ছুটে যেতেন তিনি। হাস্যোজ্জ্বল, সৎ ও সহানুভূতিশীল এই মানুষটির এমন বিদায় মানতে পারছে না কেউই।

“ওদের বাবার জায়গা কে নেবে? আমার ছেলেটা বাবার বুক ছাড়া ঘুমাতে পারে না। সারারাত কাঁদে, বাবাকে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু ও তো জানে না বাবা কী জিনিস…” —দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন পিয়া।

সরকারের প্রতি ক্ষোভ ঝরে তাঁর কণ্ঠে—
“কেন এমন অবহেলাভাবে কাজ হলো? জানত মানুষ নিচ দিয়ে চলাচল করে। সরকার সচেতন হলে আজ আমার স্বামী বেঁচে থাকত। আমার সোনামনি দুজন বাবাহারা হতো না।”

প্রতিবেশী রোজা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“সরকারের গাফিলতিতে এই মৃত্যু। পাঁচ লাখ টাকায় কি তাঁর জীবন ফিরবে? সারাজীবন এই পরিবারকে দেখবে কে? বিচার কি কোনোদিন হবে?”

নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাকী দাস জানান—
প্রশাসন পরিবারের পাশে রয়েছে এবং জানাজা ও দাফনকার্যে উপস্থিত থেকেছে।

ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত ছিলেন আবুল কালাম। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে থাকতেন সিদ্ধিরগঞ্জের ভাড়া বাসায়। আর্থিক সংকটের ভিড়েই স্বপ্নপূরণের লড়াই চলছিল তাঁর। কিন্তু নির্মাণ–অবহেলার কারণে সেই স্বপ্ন থেমে গেল মাত্র এক দুর্ঘটনায়—হতবাক করে গেল দুই অবুঝ শিশুকে, ভেঙে দিল পরিবারকে।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মেহেরপুরে খোকসা যুব সংঘের কমিটি গঠন: সভাপতি হামিদুল, সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা

মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় স্বামীহারা পিয়ার আর্তনাদ: ‘আমার সন্তানরা এখনও বুঝতে পারে না, বাবা আর ফিরবে না’

আপডেট সময় ০৯:৪৮:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

 


“আমার সন্তানরা এখনও বুঝতে পারে না, তাদের বাবা আর কখনো ফিরবে না। তারা বলে, ‘বাবা ঘুমিয়ে আছে মা, তুমি কেন কাঁদছ?’ আমি কিভাবে ওদের বোঝাই—ওদের বাবা আর কোনোদিন জাগবে না…”
কান্নায় ভেঙে পড়া কণ্ঠে এসব কথাই বলেন রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া।

গতকাল সোমবার শরীয়তপুরের নড়িয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থানে স্বামীর দাফনের পর বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন তিনি। প্রিয়জনকে হারিয়ে দুই অবুঝ শিশুকে বুকে জড়িয়ে পিয়ার আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ।

তিনি বলেন, জীবনের অভাব–কষ্ট কখনো পরিবারকে বুঝতে দেননি কালাম। স্ত্রী–সন্তান কিংবা ভাইবোন—কারোর সমস্যা হলে সবার আগে ছুটে যেতেন তিনি। হাস্যোজ্জ্বল, সৎ ও সহানুভূতিশীল এই মানুষটির এমন বিদায় মানতে পারছে না কেউই।

“ওদের বাবার জায়গা কে নেবে? আমার ছেলেটা বাবার বুক ছাড়া ঘুমাতে পারে না। সারারাত কাঁদে, বাবাকে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু ও তো জানে না বাবা কী জিনিস…” —দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন পিয়া।

সরকারের প্রতি ক্ষোভ ঝরে তাঁর কণ্ঠে—
“কেন এমন অবহেলাভাবে কাজ হলো? জানত মানুষ নিচ দিয়ে চলাচল করে। সরকার সচেতন হলে আজ আমার স্বামী বেঁচে থাকত। আমার সোনামনি দুজন বাবাহারা হতো না।”

প্রতিবেশী রোজা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“সরকারের গাফিলতিতে এই মৃত্যু। পাঁচ লাখ টাকায় কি তাঁর জীবন ফিরবে? সারাজীবন এই পরিবারকে দেখবে কে? বিচার কি কোনোদিন হবে?”

নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাকী দাস জানান—
প্রশাসন পরিবারের পাশে রয়েছে এবং জানাজা ও দাফনকার্যে উপস্থিত থেকেছে।

ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত ছিলেন আবুল কালাম। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে থাকতেন সিদ্ধিরগঞ্জের ভাড়া বাসায়। আর্থিক সংকটের ভিড়েই স্বপ্নপূরণের লড়াই চলছিল তাঁর। কিন্তু নির্মাণ–অবহেলার কারণে সেই স্বপ্ন থেমে গেল মাত্র এক দুর্ঘটনায়—হতবাক করে গেল দুই অবুঝ শিশুকে, ভেঙে দিল পরিবারকে।