ঢাকা , রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
চকরিয়াতে জাতীয় নাগরিক পার্টির গাড়িবহর আটকে রেখেছে বিএনপির লোকজন: হান্নান মাসুদ সালাউদ্দিনকে ‘গডফাদার’ ডাকায় উত্তাল কক্সবাজার, এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর চাঁদা নেব না, নিতেও দেব না: জামায়াত আমির বক্তব্যের মাঝে মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়ে গেলেন জামায়াত আমির মজলুমরা আজ জালিম হয়ে উঠছে: নুর জামায়াতের সমাবেশে দাওয়াত পায়নি বিএনপি বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের জায়গা হবে না: জামায়াতের সমাবেশে সারজিস উগান্ডায় বোম পড়লেও কি বিএনপির দোষ?: পার্থ বর্তমানে আওয়ামী লীগ বলে কিছু নেই, এটি একটি মাফিয়া চক্রে পরিণত: সোহেল তাজ ভারতের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেওয়ায় আমার ছেলে শহীদ হয়: আবরার ফাহাদের বাবা

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে এক বছরেও বিচার হয়নি, পলাতক ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০৯:২৪:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • ২০৫ বার পড়া হয়েছে

‘আমার ছেলের দোষটা কী ছিল?’—শুধুই এই প্রশ্নে আজও কাঁদেন মা মনোয়ারা বেগম। চোখ বেয়ে নেমে আসে জলের ধারা। এক বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো বিচার শুরু হয়নি, বিচার হয়নি সেই বিকেলের গুলির, যে গুলিতে নিভে গিয়েছিল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আন্দোলনের অগ্রসেনানী আবু সাঈদের জীবনপ্রদীপ।

গত বছরের ১৬ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এরপর থেকেই শোক, প্রতিবাদ আর অপেক্ষায় কেটেছে তার পরিবারের প্রতিটি দিন।

পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামে ছেলের কবরের পাশে বসেই কাটে মা মনোয়ারা বেগমের সময়। কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলের কি দোষ আছিল! গুলি কইরা মাইরা ফালাইলো, এখনো বিচার হইলো না। হামার চাওয়া একটাই—যারা খুন করছে, তাদের শাস্তি হউক।’

বাবা মকবুল হোসেনের চোখে মিশে আছে গর্ব আর ক্ষোভ। বলেন, ‘ছেলের উছিলায় অনেক মানুষ মুক্তি পাইছে—এটা গর্ব। কিন্তু ছেলে নাই—এটা জীবনভর কষ্টের।’

জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে সোমবার আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের মামলায় বড় অগ্রগতি ঘটেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আনুষ্ঠানিকভাবে ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছে এবং পলাতক ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

আসামিদের মধ্যে আছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদ। চারজন ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার আছেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক এএসআই আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

তবে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। তারা বলছে, মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সম্পৃক্ততা ছিল—যা প্রতিবেদনে গোপন করা হয়েছে। শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধা শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ‘জাতিসংঘের প্রতিবেদনে একে স্পষ্টভাবে পরিকল্পিত পুলিশি হত্যাকাণ্ড বলা হলেও আইসিটির প্রতিবেদনে এটিকে “প্রশাসনিক অবহেলা” হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।’

তদন্তের আগে গণশুনানির প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাতিল করায় প্রতিবাদ বাড়ছে।

অন্যদিকে শহীদের বড় ভাই আবু হোসেন আইসিটির ওপর আস্থা রেখে বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই। কোনো নিরপরাধ যেন ফাঁসুক না, আবার প্রকৃত অপরাধীও যেন ছাড় না পায়।’

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চকরিয়াতে জাতীয় নাগরিক পার্টির গাড়িবহর আটকে রেখেছে বিএনপির লোকজন: হান্নান মাসুদ

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে এক বছরেও বিচার হয়নি, পলাতক ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

আপডেট সময় ০৯:২৪:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

‘আমার ছেলের দোষটা কী ছিল?’—শুধুই এই প্রশ্নে আজও কাঁদেন মা মনোয়ারা বেগম। চোখ বেয়ে নেমে আসে জলের ধারা। এক বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো বিচার শুরু হয়নি, বিচার হয়নি সেই বিকেলের গুলির, যে গুলিতে নিভে গিয়েছিল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আন্দোলনের অগ্রসেনানী আবু সাঈদের জীবনপ্রদীপ।

গত বছরের ১৬ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এরপর থেকেই শোক, প্রতিবাদ আর অপেক্ষায় কেটেছে তার পরিবারের প্রতিটি দিন।

পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামে ছেলের কবরের পাশে বসেই কাটে মা মনোয়ারা বেগমের সময়। কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলের কি দোষ আছিল! গুলি কইরা মাইরা ফালাইলো, এখনো বিচার হইলো না। হামার চাওয়া একটাই—যারা খুন করছে, তাদের শাস্তি হউক।’

বাবা মকবুল হোসেনের চোখে মিশে আছে গর্ব আর ক্ষোভ। বলেন, ‘ছেলের উছিলায় অনেক মানুষ মুক্তি পাইছে—এটা গর্ব। কিন্তু ছেলে নাই—এটা জীবনভর কষ্টের।’

জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে সোমবার আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের মামলায় বড় অগ্রগতি ঘটেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আনুষ্ঠানিকভাবে ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছে এবং পলাতক ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

আসামিদের মধ্যে আছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদ। চারজন ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার আছেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক এএসআই আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

তবে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। তারা বলছে, মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সম্পৃক্ততা ছিল—যা প্রতিবেদনে গোপন করা হয়েছে। শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধা শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ‘জাতিসংঘের প্রতিবেদনে একে স্পষ্টভাবে পরিকল্পিত পুলিশি হত্যাকাণ্ড বলা হলেও আইসিটির প্রতিবেদনে এটিকে “প্রশাসনিক অবহেলা” হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।’

তদন্তের আগে গণশুনানির প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাতিল করায় প্রতিবাদ বাড়ছে।

অন্যদিকে শহীদের বড় ভাই আবু হোসেন আইসিটির ওপর আস্থা রেখে বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই। কোনো নিরপরাধ যেন ফাঁসুক না, আবার প্রকৃত অপরাধীও যেন ছাড় না পায়।’